নামকরণ ঃ সমতল, হাওড় ও পাহাড় ঘেরা হযরত শাহজালাল (রঃ)’র সিলেট বিজয়ের প্রথম অভিযানের স্মৃতিবিজড়িত পূণ্যভূমি নবীগঞ্জ এর নামকরণের ক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত জনশ্র“তি মতে, হযরত শাহ নবী বা নবী বক্স (রঃ) নামে জনৈক কামিল দরবেশ শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলামের মহান বাণী প্রচারের উদ্দেশ্যে এ অঞ্চলে আগমন করেন এবং প্রবাহিত শাখা বরাক নদীর তীরে আস্তানা গাড়েন। তাঁর স্থাপিত আস্তানাকে কেন্দ্র করে লোক সমাগম বাড়তে থাকার ফলে এখানে একটি গঞ্জ বা বাজারের গোড়াপত্তন শুরু হয়। পরবর্তীতে তাঁর নামের সম্মানার্থে এ গঞ্জ বা বাজারের নামকরণ করা হয় নবীগঞ্জ।
নবীগঞ্জ নামকরণের ক্ষেত্রে অন্য একটি ভিন্ন মত প্রচলিত আছে, যে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর প্রতি
শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ নবীগঞ্জ নামকরণ করা হয়েছিল।
প্রথম মতটি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর রিপোর্টে লিপিবদ্ধ করা আছে এবং দ্বিতীয় মতটি সম্পর্কে ডাঃ
মোহাম্মদ আফজাল ও সৈয়দ মোস্তফা কামাল সম্পাদিত ‘হবিগঞ্জ পরিক্রমা’ গ্রন্থে প্রথম মতটি নাকচ করে দ্বিতীয় মতটির গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি তুলে ধরেছেন এবং তাদের নবীগঞ্জ নামকরণের যুক্তিটি গ্রহণযোগ্য।
প্রশাসনিক ক্রমবিকাশে নবীগঞ্জ ঃ
বৃটিশ শাসনে নবীগঞ্জ ঃ
১৭৫৭ খৃষ্টাব্দে পলাশী বিপর্যয়ের ৮ বছর পর ১৭৬৫ খৃষ্টাব্দে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলা, বিহার ও
উড়িষ্যার দেওয়ানী সনদ লাভ করে। এ বছরই সিলেট ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে। ১৮৮৪ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত সিলেট ছিল ঢাকা বিভাগের অধীনে। ১৯০৫ খৃষ্টাব্দে বাংলাকে ভাগ করে পূর্ববঙ্গ আসাম প্রদেশ সৃষ্টি করা হলে সিলেটকে চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ১৯৪৭ সালের ১৩ ই আগষ্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্বদিন পর্যন্ত সিলেট আসামের ১ টি জেলা হিসেবে গণ্য ছিল। অর্থাৎ এই সময়ে নবীগঞ্জ আসাম প্রদেশের ১ টি জেলা হিসেবে সিলেটের অন্তর্ভূক্ত ছিল। ১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগষ্ট ব্রিটিশের কবল থেকে মুক্ত হয়ে ১ টি স্বাধীন সার্বভৌম পাকিস্তান কায়েম হলে সিলেট তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের ১ টি জেলায় পরিগণিত হয়। তখন সিলেটকে পুনরায় চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভূক্ত করা হলে নবীগঞ্জকে চট্টগ্রাম বিভাগে ন্যস্ত করা হয়। ১৯৮৪ সালে সাবেক সেনা শাসক (রাষ্ট্রপতি) এইচ.এম.এরশাদ প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে
মহকুমাগুলোকে জেলায় পরিণত করলে সিলেট জেলাকে ৪ টি জেলায় বিভক্ত করা হয়। যথা-সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কর্তৃক উপরোক্ত ৪টি জেলার সমন্নয়ে বাংলাদেশের ৬ষ্ঠ বিভাগ হিসেবে সিলেট বিভাগ ঘোষণা করেন। ১৯৯৫ সালের ১লা আগষ্ট আনুষ্ঠানিকভাবে সিলেট বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়।
রাজস্ব জেলা নবীগঞ্জ ও এর আওতাধীন পরগনা সমূহ ঃ
জন উইলস এর আমলে ১০ টি রাজস্ব জেলার মধ্যে নবীগঞ্জ ছিল ১ টি অন্যতম রাজস্ব জিলা এবং এর
অধীনস্থ ছিল মোট ১৬ টি পরগনা এগুলো হচ্ছে ১। দিনারপুর ২। মান্দার কান্দি ৩। চৌকি ৪। মুড়াকরি ৫। বানিয়াচং ৬। কুর্শা ৭। জোয়ার বানিয়াচং ৮। আগনা ৯। বিথঙ্গঁল ১০। জলসুখা ১১। জন্তরী ১২। বাজে সুনাইত্যা ১৩। সত্রসতী ১৪। জোয়ান শাহী ১৫। বাজে সত্রসতী ১৬। কিং কুর্শা
নবীগঞ্জ মুন্সেফী আদালত ঃ
“হিস্ট্রি এন্ড স্ট্যাটিস্টিক অব ঢাকা ডিভিশন” নামক গ্রন্থে আছে বৃহত্তর সিলেটে ৬ টি মুন্সেফী আদালত ছিল। তন্মধ্যে নবীগঞ্জে ১ টি অন্যতম মুন্সেফী আদালত ছিল। যার আয়তন ছিল সরসতী পরগনার শেষ অর্থাৎ শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত। ১৮৭৮ সালে হবিগঞ্জ মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে নবীগঞ্জে মুন্সেফী আদালত বিলুপ্ত হয়।
নবীগঞ্জ আধুনিক থানা ঃ
১৯২২ সালের ১০ জানুয়ারী ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নবীগঞ্জকে ১ টি আধুনিক থানা ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৩
সালে নবীগঞ্জকে মান উন্নিত থানায় রূপান্তরিত করা হয়। ১৯৮৪ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ.এম. এরশাদের আমলে নবীগঞ্জকে উপজেলা ঘোষণা করা হয়।
সার্কেল প্রথায় নবীগঞ্জ ঃ
ব্রিটিশ শাসনামলে নবীগঞ্জকে ৪১ টি সার্কেলে বিভক্ত করা হয়। সার্কেলের প্রধান নির্বাহীকে
সরপঞ্চ বলা হতো। ১৯৫৮ সালে ফিল্ড মার্শাল আইয়্যূব খান কর্তৃক সার্কেল প্রথা বিলুপ্ত হয়ে ইউনিয়ন কাউন্সিল গঠিত হয়। এ সময়ে নবীগঞ্জকে ১২ টি ইউনিয়ন কাউন্সিলে বিভক্ত করা হয়। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হয়। তখন নবীগঞ্জকে ১৩ টি ইউনিয়ন পরিষদে বিভক্ত করা হয়। ১৯৯৭ সালে নবীগঞ্জকে পৌরসভায় উনীœত করা হয়। পৌরসভার ১ম ও বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী।
(২) ভৌগোলিক অবস্থান ঃ নবীগঞ্জ উপজেলা হবিগঞ্জ জেলা শহর থেকে ২৫.৬০০ কিঃ মিঃ এবং বিভাগীয় শহর সিলেট থেকে প্রায় ৬১.০০০ কিঃ মিঃ দূরত্বে ২৪º ২৫' ও ২৫º ৪১' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১º ২৪' ও ৯১º ৪০' পূর্ব দাঘিমাংশে অবস্থিত।
(৩) সীমা ঃ নবীগঞ্জ উপজেলার উত্তরে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই ও জগন্নাথপুর উপজেল এবং সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলর অংশ বিশেষ। দক্ষিণে হবিগঞ্জ সদর ও বাহুবল উপজেলা। পূর্বে মৌলভী বাজার জেলার সদর ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা এবং সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার অংশ বিশেষ। পশ্চিমে হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলা।
আয়তন ও লোকসংখ্যা ঃ ৪৩৯.৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট নবীগঞ্জ উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ৩,২৭৬২৬ জন (২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী)। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৬৪৮ জন। এ উপজেলায় শিক্ষার হার শতকরা ৩৯.৩৮ ভাগ।
প্রশাসনিক বিন্যাস ঃ নবীগঞ্জ উপজেলায় ১৩ টি ইউনিয়ন ( ১নং বড় ভাকৈর (পঃ), ২ নং বড় ভাকৈর (পূঃ), ৩ নং ইনাতগঞ্জ, ৪ নং দীঘলবাক, ৫ নং আউশকান্দি, ৬ নং কুর্শি, ৭ নং করগাঁও, ৮ নং নবীগঞ্জ, ৯ নং বাউসা, ১০ নং দেবপাড়া, ১১ নং গজনাইপুর, ১২ নং কালিয়ারভাঙ্গা ও ১৩ নং পানিউমদা) ০১ টি পৌরসভা, ০১ টি থানা রয়েছে।
নদ-নদী ঃ বিবিয়না, বিজনা, গোপলা, শাখা বরাক, ডেবনা, কুশিয়ারা, পিংলি।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ঃ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে রয়েছে ০২ টি পাঠাগার, ০৬ টি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস